Thursday, October 22, 2015

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী


১. নাম ও পরিচিতি:
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর নামের ব্যপারে অনেক অভিমত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তাঁর নাম ছিল আবদুশ্ শামস বা আবদে উমর। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর নাম রাখা হয় আবদুর রহমান। তিনি দক্ষিণ আরবের আযদ গোত্রের সুলায়ম ইবন ফাহাম বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাঁর পিতার নাম সাখর এবং মাতার নাম উম্মিয়া বিনতে সফীহ মতান্তরে মায়মুনা। তিনি হিজরী পূর্বকালে জন্মগ্রহণ করেন। বিড়াল ছানাকে ভালবাসতেন বিধায় রাসূল (সাঃ) তাকে আবূ হুরায়রা أبو هريرة তথা বিড়াল ছানার মালিক বা পিতা উপনামে ডাকতেন। এ উপনামেই তিনি অধিক পরিচিত।

২. নামকরণ:আবু হুরায়রা নামটিতে একটি মজার কাহিনী রয়েছে। একদিন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) জামার আস্তিনের নিচে একটি বিড়াল ছানা নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হন। বিড়ালটি হঠাৎ সকলের সামনে বেরিয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে রাসুল (সাঃ) তাঁকে রসিকতা করে- 'হে বিড়ালের পিতা'! বলে সম্বোধন করলেন। এরপর থেকে তিনি আবু হুরায়রা নামে খ্যাতি লাভ করেন। তাকে আবু তুরাব নামেও ডাকা হতো। একদিন তিনি মাটিতে শুয়ে আছেন দেখে রাসুল (সাঃ) বললেন কিহে, আবু তুরাব মাটিতে শুয়ে আছ কেন? এর পর থেকে তার নাম আবু তুরাব হয়। এ নামেও তিনি পরিচিত।

৩.  ইসলাম গ্রহণ:তিনি ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৭ম হিজরীতে মুহররম মাসে  খায়বর যুদ্ধের প্রাক্কালে মদীনায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ত্রিশ বছরের মত।

৪. যুদ্ধে অংশগ্রহণ: ইসলাম গ্রহণের পর হতে  তিনি ইসলামের সকল যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) এ সাথে অংশ গ্রহণ করেন। ইবনে আসীর বলেন,
অর্থাৎ, তিনি রাসূলের সাথে সকল যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন।

৫. ইসলামের দাওয়াত: রাসুলে করীম (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বৃদ্ধা মা ছিলেন। তখনও তাঁর মা পৌত্তলিকতার ওপর অটল ছিলেন। তিনি তাঁর মাকে সব সময় ইসলামের দাওয়াত দিতেন, কিন্তু তাঁর মাতা অস্বীকার করতেন। ফলে তিনি দুঃখ অনুভব করতেন। একদিন তাঁর মাকে আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান আনার আহ্বান জানালে তাঁর মা রাসুল (সাঃ)-এর প্রতি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করলেন। এতে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) ভীষণ মর্মাহত হয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাসুল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন। রাসুল (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কাঁদছো কেন? তিনি বললেন, আমি সব সময় আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দেই; কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করেন। প্রতিদিনের মতো আজো আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম। এরপর তিনি আপনার সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমাকে ভীষণ পীড়া দিয়েছে। ইয়া রাসুলাল্লাহ! দু'আ করুন আল্লাহ যেন আমার মায়ের হৃদয়কে ইসলামের আলোকে আলোকিত করে তুলেন। তখন রাসুল (সাঃ) দু'আ করলেন- 'হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান কর।'-এর ফলেই তাঁর মা ইসলামের ছাঁয়াতলে প্রবেশ করে নিজেকে ধন্য করেন।

৬.  হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অবদান: সাহাবীদের মাঝে তিনিই সর্বাধিক হাদীস বর্ণনা করেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা মোট ৫৩৭৪টি মতান্তরে ৫৩৭৫টি। একারনে তাকে রাবীদের নেতা বলা হয়। ইমাম বুখারীর মতে, আট শতাধিক রাবী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আসহাবে সুফ্ফা এর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

৭.  ইন্তেকাল: ৫৭ মতান্তরে ৫৮/৫৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাকে জান্নাতুল বাকী তে দাফন করা হয়।

No comments:

Post a Comment